আমরা সমাজ নিয়ে ভাবার আগে, অনেক সময়েই নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভুলে যাই। যদিও “আমি কি ঠিক আছি ? আমার উদ্দেশ্য ভালো তো ? না-কি কাউকে উসকানিমূলক অনৈতিক পথে কিংবা বিপথগামী করছে কি”?- এসব চিন্তায় নিজেকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। যাকে বলে আত্ম-উপলব্ধি।
পৃথিবীতে অনেক মানুষই আছে-নিয়মমাফিক ‘আসে’,আর ‘যায়’…খেয়ে দেয়ে বেঁচে থাকাটাকেই যারা জীবন বলে- আমরা কি তাদের দলে? একবার না হয় জিজ্ঞাস করি নিজেকে। হ্যা, আসা আর যাওয়া- এসব যখন নিরুদ্দেশ হয় তখন উপলব্ধির প্রয়োজন কিন্তু, নিরব থাকার মধ্যেও যদি উদ্দেশ্য কিংবা হিকমত থাকে, তবে সেক্ষেত্রে তেমন থাকাই বুদ্ধিমত্তার কাজ।
লক্ষ্য করে দেখবেন-এই পৃথিবী, এই সমাজ সেইসব লোকদের মাউষেরা বীর কিংবা বিপ্লবী বলে যারা রাজনৈতিক ময়দানে নিজের বীরত্ব দেখাতে পারে, নেতার মতো জোরালো একটা বক্তব্য দিয়ে- নিজের অবিবাহিত জীবনের প্রসংস্র গান গাইতে পারে। যদিও আসল বিপ্লবী তো তারাই, যারা নিজের মনের সাথে প্রতিনিয়ত নিজেরা বিপ্লব করে। দায়িত্ব পালনের জন্য থাকে সদা সচেতন। যুদ্ধ করে নিজের একান্ত সেই কুপ্রবৃত্তির সাথে, যে কুপ্রবৃত্তি প্রতিবার তার নিজের পবিত্র মনকে কুলষিত করার চেষ্টা করে। একেই তো বলে আসল বিপ্লব! এটাই তো হলো নিজের দূর্বলতাকে জয় করা। এটাই তো হলো নিরব সংগ্রাম। যার প্রতিদান আছে সেই চিরস্থায়ী জীবনে।
সুতরাং, আমি মনে করি- সমাজ পরিবর্তনের চিন্তার সাথে সাথে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত- (বিশেষ করে নিজের ব্যাপারে) তাহলো-
# আমরা যাতে নিজেকে নেতা না ভেবে জাতির খাদেম ভাবি। সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। আর কখনো স্বার্থ যদি চলেই আসে তাহলে নিজেকে জিজ্ঞাস করি- এটা ভালো স্বার্থ নাকি খারাপ ? আমাদের স্বার্থ নিজের জন্য কিংবা অন্য কারো জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিকর কিনা।
# নিজের শত্রুর সাথেও ভালোভাবে কথা বলি। মতের মিল না হলেও সে যাতে আমাদের ব্যাপারে বলতে বাধ্য হয়- ‘নাহ! যা হোক না হোক, মানুষটা ভালো’।
# আক্রমণাত্মক কথা না বলে বুদ্ধিবৃত্তিক, যৌক্তিক কথা বলা উত্তম। অথবা চুপ থাকা উচিত। রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই তো আমরা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী!
# একটা মানুষের সবদিক খারাপ হয় না। তাই কিছু একটা দেখে কারো ব্যাপারে ঢালাওভাবে মন্তব্য করা ঠিক নয়। অপরপক্ষের দিকটা যখন আমরা বুঝতে পারবো- তবেই না আমরা মানবদরদী, তবেই না সমাজ পরিবর্তনের আশা করতে পারি।
# পৃথিবীর দুটি চমৎকার, স্পষ্ট ও ছোট শব্দ হলো- ‘হ্যা’ ও ‘না’। এই শব্দ দুটি কাউকে কষ্ট দিক বা শান্তি দিক, তবে অন্তত ধোঁকা দেয় না। তাই এই শব্দ দুটি বলার সাহস রাখা উচিত।
উপরে সমাজ পরিবর্তনের চিন্তায় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত- তার কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছি- এছাড়াও আরো কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছিঃ
# সমাজ পরিবর্তন সহজ এটা ধরে নেয়াটা বোকামি। কখনো পরিবারের ওপর দিয়ে যায়, কখনো নিজের জীবনের ওপর দিয়ে যায়- কখনোবা নিরবে নফসের ওপর দিয়েও যায়। তবে, কাজ একটাই ধৈর্যহারা হলে চলবে না।
# সমাজ পরিবর্তনে অন্তত নিজ থেকে আমরা সফল- এটা তখনই বলতে পারবো যখন আমরা নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবো। সেই পথে চলবো, সেই কথা বলবো- যেটাকে আমরা সঠিক ধরে নিয়েছি।
# ‘আমার কারণে সত্য প্রতিষ্ঠা হওয়া থেমে থাকবে’- এমন ধারণা রাখা ঠিক নয়। সত্য প্রতিষ্ঠিত হবেই-তবে তাতে আমাদের অংশিদার থাকলে নেকির ভাগটা না হয় আমরাও পেলাম।
# সবখানে আবেগীয় হলে হয় না, তাই বিবেক দিয়ে বিবেচনা করা দরকার।
# নিজের রূপ কিংবা গুণের প্রতি অহংকারি হলে, বুঝে নিতে হবে, পতন নিকটে।
# আমরা অদৃশ্যের মালিক নই। কে কোন পরিস্থিতির শিকার- জানি না। অনেক সময় মানুষের ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক সমস্যাবলী বুঝাও যায় না। তাই হুট করে কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মন্তব্য করা অনুচিত।
# পৃথিবীতে আমরা সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারবো না। তাই সিদ্ধান্ত নিতে অন্যের দিকে না তাকিয়ে দৃঢ়ভাবে যেটা সঠিক তার পক্ষে বলা উচিত।
অবশেষে বলবো- রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেয়েও সমাজ পরিবর্তন কঠিন। কারণ, এখানে প্রশাসনিক কোনো দাবি-দাওয়া বা জোর নেই। তাই মনের দিক থেকে মুক্ত ও স্বাধীন জনগণের মনকে সুন্দর করার মতো কঠিন কাজটি সংযমের সাথে করতে পারলে, এক সুষ্ঠ রাজনৈতিক সংস্কৃতি উপহার দেয়াও ইনশাআল্লাহ কঠিন হবে না।
Views: 0
৯ Comments
সংখ্যালঘু
অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম…
প্রবীণ পথিক
পথিক মানুষ তো, হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম…:-)
সংখ্যালঘু
অনেক কঠিন ও বাস্তব কথা বলেছেন। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়…
সীমান্তের বিদ্রোহী
dharun ekti lekha.thanks
প্রবীণ পথিক
@সীমান্ত- ধন্যবাদ…
প্রবীণ পথিক
@সংখ্যালঘু- পরবর্তী পর্ব-
http://www.bayanno.org/%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%A8-%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AA-2/
পথপ্রদর্শক
ভালো লিখেছেন।
‘হ্যা’ ও ‘না’ এই শব্দ দুটি বলার সাহস রাখা উচিত। শোনার ও…
মাহফুজ বিন নোমানী
sobar egulo jana uchit.
প্রবীণ পথিক
মূল্যায়নের জন্য ধন্যবাদ…