এক.
৩-৪ বছরের ছোট এক ছেলের সাথে কথা বলছিলাম।২০-২১ বয়সেই সে ব্যবসা শুরু করেছে।কথায় কথায় তাকে বললাম,এখনো বিয়ে করছেননা কেন?
বলে-আব্বু আরো কয়েক মাস আগে থেকেই বিয়ের কথা বলতেছে।কিন্তু এখন বিয়ে করা ঠিক হবেনা।
বললাম-কেনো?
বললো-এখনো ব্যবসা ভালো করে গুছিয়ে উঠতে পারিনি।ঘর-দোর ভালো করে করতে পারিনি।আগে এগুলো সব ভালোভাবে করে তারপর বিয়ে করবো।তাহলে ভালো জায়গায় বিয়ে করতে পারবো।
বললাম-বিয়ে মানেই কি উন্নত ব্যবসা ও ভালো ঘর-দোর হওয়া?
বললো-না।কিন্তু এসব ছাড়া কেই বা তার মেয়ে দিবে?
দুই.
আমাদের দাদী,ফুফুদের বিয়ের কথা বর্তমানের শিক্ষিত প্রজন্ম শুনলে সেটাকে রুপকথার গল্প বলে মনে করবে।উনাদের প্রায় সবার বিয়ে হয়েছে ১০ থেকে ১২ বছরের মাঝে।
এখন এটা বাল্যবিবাহের মধ্যে পড়লেও এটির দ্বারা সমাজ অশ্লীলতার পংকিল রাস্তা থেকে বেঁচে গিয়েছে।ছেলের বয়স ছিলো ১৫ থেকে ১৮ এর মধ্যে।উনারা অশ্লীলতা ও পাপ বুঝার পূর্বেই তাদেরকে সেটা বাঁচার পন্হা বাতলে দেওয়া হতো।
এখন ক্যারিয়ার গঠণের নামে ছেলের বয়স ৩২ থেকে ৩৫ করা হচ্ছে।আর মেয়ের বয়স ২৫ থেকে ৩০ করা হচ্ছে।আর এটাকে জায়েজ করার জন্য মনের জেনা,চোখের জেনা,কানের জেনা বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করে তাদেরকে অশ্লীলতা থেকে বাঁচানোর জন্য বালির বাঁধ দেওয়া হচ্ছে।
যে প্রয়োজনটি আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টিগতভাবেই দিয়ে দিয়েছেন।সেই প্রয়োজনটিকে আমরা অস্বীকার করে সমাজের ভিতরে অশ্লীলতা ও অন্যায়ের রাস্তাই উন্মুক্ত করে দিচ্ছি মাত্র।
তিন.
আব্বু কুফুর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন-কুফু হচ্ছে, বংশের মাঝেই ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়া। প্রথম প্রথম ভাবতাম,এটা আবার কুফুর কি ধরণের ব্যাখ্যা! রাসুল (সাঃ) তো কোথাও কুফু হিসেবে এরকম তেমন কিছুই বলেন নাই।
কিন্তু এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ছিলো ব্যাপক। বংশের বাহিরের বিয়েগুলোতে দুইপক্ষের রেষারেষি চলতেই থাকে। ছেলেপক্ষ সবসময় মেয়েপক্ষের যোগ্যতা ও বংশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে,আবার একইভাবে মেয়েপক্ষ ছেলেপক্ষের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।আর এর সাথে যৌতুকের সংমিশ্রণ থাকলে তো সেটা বিভেদের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়।
কিন্তু বংশের মাঝে বিয়ে দিলে এর কোনটিই ঘটেনা।ছেলেপক্ষ মেয়েপক্ষের যোগ্যতা ও বংশ নিয়ে কথা তোলার সুযোগ পায়না।তুলতে গেলে সেটা নিজের গায়েই লাগে।আর রক্তের সম্পর্কের ভিতর যৌতুকের মত হীন চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগই থাকেনা।
চার.
বর্তমানে আমাদের সমাজে বিয়ে করাটাকে মৌলিক ইবাদতের মাঝে গণ্য করা হয়না।অথচ ইসলামে এটিকে একটি প্রয়োজনীয় সুন্নাহ হিসেবে গণ্য করা হয়।যদি কারো গুনাহে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে,তাহলে তার জন্য এটিকে ফরজ বলা হয়েছে।
তবে বিয়ে ছাড়া কেউ থাকলে সেটা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত হবেনা।তবে মানবীয় চাহিদার উর্ধ্বে কোন মানুষ যেতে পারেনা।যারা বিয়ে ছাড়া থাকেন,তাদের বেশীরভাগেরই শারিরীক অসুস্হতা রয়েছে।
প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে ইসলাম এটিকে ব্যাখ্যা করেছে।রাসুল (সাঃ)এটিকে দ্বীনের অর্থেক বলেও উল্লেখ করেছেন।বিয়ের বিষয়ে কঠোরতা করা হলে সমাজে অশ্লীলতা ও অনাচারের বিস্তৃতি ঘটাই স্বাভাবিক।
পাঁচ.
সময়ের সাথে সাথে বিয়েটাকে কঠিণ করে ফেলা হয়েছে।অনেক ইসলামিক তরুণ ব্যক্তিত্বও আছেন,যারা সামনাসামনি মনের জেনা,কানের জেনা,চোখের জেনা ব্যাখ্যা দিলেও উনারা বাস্তবে এর চেয়ে কয়েক ধাপ বেশী অগ্রসর হয়ে যান।কিন্তু বাস্তবে বিয়ের কথাটাকে সবার সামনে সরাসরি তুলে ধরতে পারেননা।
আমাদের কমন সমস্যা হচ্ছে,সমাজ কি ভাববে? মানুষ কি আমাকে নির্লজ্জ বলবেনা?
আল্লাহ যে জিনিসটিকে মানুষের জন্য অপরিহার্য করে দিয়েছেন,আমরা সেই বিষয়টির জন্য সমাজ ও মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে মাপার চেষ্টা করছি।যেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা ভাববো,সেখানে মানুষের মুখের কথাকে ভয় পেয়ে থমকে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
ইন্টারনেট যেখানে হাতের মুঠোয়,সেখানে বিয়ে থেকে ছেলেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখলেও সমস্যা নাই।ইন্টারনেট তাদের বেশীরভাগ মৌলিক চাহিদাকে পূরণ করে দিতে পারে।
কম বয়সে বিয়ে করাটা নির্লজ্জতা,কিন্তু গোপনে পাপাচারে লিপ্ত থাকলে তাতে কথা বলার সুযোগ নেই।সহজ যুক্তি তো আছেই,গোপণ দোষ আল্লাহ গোপণ রাখবেন।
ছয়.
হল থেকে বের হয়ে বাহিরে যাচ্ছি। কিছুদূর যাওয়ার পরে দেখি,তিনটি ছেলে গল্প করতে করতে পথ চলছে।একজনের মুখে দাড়িও রয়েছে।সাথের দুজন বলছে-দোস্ত,তুই বিয়ে করে ফেল্,তাহলে তাড়াতাড়ি জব পাবি।
তাদের কথা শুনে মনে মনে হাসছি।নিজের খরচ জোগানোর জন্য খুব বেশী কষ্ট করতে হয়না। একটা টিউশনি করলেই চলে যায়। কিন্তু যখন দুজনের চিন্তা ঢুকে যায়,তখন অটোমেটিক্যালি নিজের রোজগারের রাস্তা নিজেকে খুজে নিতে হয়।
Views: 5