আসসালামু আলাইকুম ডক্টর বিলাল ফিলিপস আমরা খুবই আনন্দিত আপনাকে আমাদের মাঝে পেয়ে প্রথমেই জানতে চাই ডক্টর বিলাল ফিলিপস কে আপনার জীবন সম্পর্কে সংক্ষেপে বলবেন?
আলহামদুলিল্লাহ। আমাকে আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ। আমার জন্ম জামাইকায়। বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতক করেছি। এটাতেই আমার আগ্রহ ছিল। কানাডায় পড়াশোনাকালীন আমি কমিউনিজমের সঙ্গে যুক্ত হই এবং কমিউনিস্ট পার্টির আনঅফিশিয়াল মেম্বার হই, এসব বিষয়ে ছাত্রবিক্ষোভে আমি সক্রিয় ছিলাম। আমি যখন টরেন্টো ফিরে আসি, তখন ইসলামের পরিচয় পাই। আমি ইসলাম গ্রহণ করি এবং সেখান থেকে ইসলামের বিষয়ে বিশদ পড়াশোনা করতে সৌদি আরবে গিয়েছিলাম। আর আমার জীবনের একটি দীর্ঘ সময় আমি আরব বিশ্বেই কাটাই।
ঈমানের ক্ষেত্রে আপনার জীবন কেমন ছিল ? আপনি কিসে বিশ্বাস করতেন ?
আমি একজন খ্রিস্টান হিসেবে বড় হয়েছি, কিন্তু এটাকে তারা বলতো একজন নাম মাত্র খ্রিস্টান। আমি সত্যি বলতে খ্রিষ্ট ধর্ম ত্যাগ করিনি, একজন কমিউনিস্ট হওয়ার জন্য। বরং এটি যে মৌলিক ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত তার কারণে আমি কমিউনিজম গ্রহণ করি, এবং তা করতে গিয়ে আমি খ্রিষ্টধর্মকে রিজেক্ট করেছি। তো আসলে এটা এমন কোন মানসিক সংগ্রাম ছিল না। আমার কি খ্রিষ্ট ধর্মে বিশ্বাস করা উচিত, যীশু কে আর কি ছিল তার? না এর একমাত্র কারণ ছিল কমিউনিজম কি প্রতিনিধিত্ব করছে। এটার সমাধান ছিল মানুষের দুর্দশা, অসুবিধা এবং সেই সকল সমস্যার বিশ্বজুড়ে মানুষ যার মুখোমুখি হয়েছিল। এই সমস্যাগুলোর একমাত্র সমাধান করা যেতে পারে কমিউনিজমের মাধ্যমে। তাই আমি কমিউনিস্ট মুভমেন্টে যোগ দিয়েছিলাম সেই উপলব্ধি থেকে। কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিজমের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর পর আমি কিছু ত্রুটি দেখতে পাই। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ত্রুটি এবং তাদের প্রকৃত অনুশীলনের ক্ষেত্রে ত্রুটি। ক্যাপিটালিজমের সাথে প্রতিনিধিত্বতায় টিকে থাকতে ব্যর্থ হবার ত্রুটি মানে ক্যাপিটালিজম এটিকে ছাড়িয়ে গেছে, বুঝলেন ? সুতরাং এর অর্থ হচ্ছে কিছু একটা তো সমস্যা ছিল। এটি যদি সঠিক পথ হয়, তাহলে এটির সামনের সারিতে থাকার কথা। কমিউনিজম ছিল থিওরিটিক্যালি সুন্দর। মানে, খুবই সুন্দর একটি প্যাকেজ। তো প্যাকেজটি বলছিল, প্রত্যেকের কাছ থেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং প্রত্যেককে তার প্রয়োজন অনুসারে। আপনি কাজ করবেন যদি আপনি শক্তিশালী হন, বরং আপনি আরেকটু বাড়তি কাজ করবেন। কিন্তু আপনার চাহিদা কম বা অল্প, তো আপনি শুধুমাত্র আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রহণ করবেন। সুতরাং যিনি আপনার পাশে আছেন, যিনি অনেক বড়, তার অনেক বেশি চাহিদা। যা উদ্ভাদিত হবে তা থেকে সে বড় অংশ পাবে, কিন্তু তার কিছুই দরকার নেই, কারণ সে এক বিশাল মানুষ এবং সেই অল্প কিছু কাজই করতে পারে। সে কেবল সামান্য কাজ করে এবং তাতেই ঠিক আছে। এসব শুনতে সুন্দর, কিন্তু বাস্তবে প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার প্রতিদান পেতে চায়, তার কৃতকর্মের, তার সকল প্রচেষ্টার।
তো আপনি যখন সত্যিটা বুঝলেন তখন কি করেছিলেন ?
সত্যি বলতে আমার মনে হয়েছিল যে আমাকে আরো দেখতে হবে। তো আমি বিভিন্ন ধর্মকে গভীরভাবে রিসার্চ করি। আমি যদি প্রথমেই ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করতাম, তবে তা নিশ্চয়ই আমার অজ্ঞতার পরিচয় হবে। যেহেতু আমার ধর্ম সম্পর্কে কোন জ্ঞান ছিল না। তো আমি পড়তে শুরু করি, বৌদ্ধ ধর্ম, হিন্দু ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে। আর দ্রুতই বুঝে গেলাম যে, সেগুলো কোনটি বাস্তব ধর্মী ছিল না। সেসব ধর্মের দাবি তাদের প্রস্তাবিত তত্ত্ব খুবই উদ্ভট, অপ্রাকৃতিক, এবং অযৌক্তিক ছিল, বুঝলেন। তো এই কারণেই আমি আরো ধর্মের অনুসন্ধান করেছিলাম বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের নানান ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলতাম। যতদিন না আমি ইসলামের পরিচয় পাই, এবং একটি নির্দিষ্ট বইয়ের কথা বলতে চাই, যার নাম “ইসলাম দ্যা মিসআন্ডারস্টুড রিলিজিয়ন”। যেখানে লেখক একটি তুলনা দেখাতে চেয়েছেন কমিউনিজম, ক্যাপিটালিজম, ইসলাম, খ্রিস্টানিটি, বুদ্ধিজম, এবং আরো অন্যান্য মতবাদ গুলোর মধ্যে। তিনি তুলনাটিতে ভালো বিষয়গুলো চিহ্নিত করেন, তারপর খারাপ বিষয়, নেতিবাচক বিষয়গুলো চিহ্নিত করেন। তো, বইটি পড়ে আমি সারসংক্ষেপে যা বুঝেছিলাম, সেটা- সেটা হলো
কমিউনিজমে যা কিছু ভালো বিষয় ছিল, আর অবশ্য কমিউনিজমের ভালো দিকও ছিল। এটাই হয়তো আল্টিমেট সলিউশন নয়, কিন্তু এর কিছু ভালো দিক ছিল। এটা অবশ্যই কিছু ভালো ধারণাকে একত্রিত করেছে। এই ভালো
বিষয়গুলোকে ইসলামেও পাওয়া যেতে পারে, আর যা কিছু ভালো নয়, নীতিবাচক ইত্যাদি। তা ইসলামে অনুপস্থিত। যেগুলি ইসলামে নেই। তো এটি এমন, মানুষের পক্ষে যত ভালো করা সম্ভব ইসলাম যেন সেই সকলকেই একত্রিত করেছে। আর সমস্ত খারাপ কাজকর্মকে এড়িয়ে গিয়েছে, সেই সকল ক্ষতিকর জিনিস যেগুলো বিভিন্ন সমাজে বহুল প্রচলিত এবং বিভিন্ন ধর্ম যেসব পালন করে।
ইসলাম সম্পর্কে প্রথম কিভাবে জানলেন ? এই গবেষণার আগে, আপনার কি কোন মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল ? আপনি বলেছিলেন আপনি মালয়েশিয়ায় ছিলেন। এবং আপনার মনে কি ধরনের চিন্তা ধারণা ছিল ? ইসলাম সম্পর্কে কোন অন্ধবিশ্বাস ছিল ? মুসলমানদের সম্পর্কে আপনার কোন ভালো ধারণা ছিল কি ?
মালয়েশিয়ায় যা দেখলাম তা ছিল একটি কালচারাল ইসলাম। ইসলাম শুধু একটি সংস্কৃতি। আমার মা একজন ইন্দোনেশিয়ানকে দত্তক নেন। সে পূর্ব মালয়েশিয়ায় বসবাস করতো। স্টেট অফ সাবা অঞ্চলটির নাম সাবা। আর আমার মা এবং বাবা দুজনেই ইসলামকে একটি ধর্ম হিসেবে সম্মান করতেন। আর তাই আমার মাকে বাড়তি কিছু কাজ করতে হতো যাতে আমার সৎ ভাইয়ের আমাদের সাথে থাকতে অসুবিধা না হয়। যেমন, রমজানে তিনি তাড়াতাড়ি উঠে যেতেন এবং আমার সৎ ভাইয়ের জন্য সেহেরি প্রস্তুত করতেন। এবং ইফতারের জন্যও তিনি ব্যবস্থা করতেন, তার জন্য খাবার, পানিও ইত্যাদি। যখন আমরা শুকরের মাংস খেতাম, তিনি তার জন্য মাছ রান্না করে দিতেন। রবিবার যদি আমরা একটু অ্যালকোহল পান করি, যেটি ঐতিহ্য গতভাবে আমাদের রবিবার রাতের খাবার, তার জন্য সেখানে আঙ্গুরের শরবত থাকতো। তো তিনি নিশ্চিত করতেন যে তার যে ইসলাম, এবং ইসলামী বিশ্বাসের সঙ্গে আপোষ না করা হয়। তো, এবং সে সে বাড়িতেই নামাজ পড়তো। মাঝে মাঝে আমি, আমার ভাই এবং বোন, যখনই তার রুমে ঢুকতাম, সবসময় আমরা তাকে মাটিতে দেখতাম, বুঝলেন। মাথা সামনের দিকে নিচে আর কোমর উপরে, আর আমরা ভাবতাম, ও কি করছে ? মানে, কারণ মালয়েশিয়াতে সেই সময়টিতে মুসলমানরা প্রকাশ্যে ইসলাম পালন করতে পারতো না। আর রাজধানীতে তো মোটেই না। সেখানে ঔপনিবেশিকরা ছিল। ব্রিটিশরা প্রধান শহরগুলোতে মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সেগুলো নির্মাণ করতে হলে শহরের সীমানার বাইরে করতে হবে। তো আমি সেই দিনগুলোতে কখনো মসজিদ দেখিনি। তার প্র্যাকটিস গুলো ছিল খুবই অদ্ভুত প্র্যাকটিস, এই ধরুন যে আমরা কাউকে যোগ ব্যায়াম করতে দেখি অথবা কেউ, যেমন ধরুন, অন্য কোন ধরনের মুভমেন্ট করছে যা অন্য ধর্মের গোষ্ঠীর মানুষদের কাছে ইউনিক। তো আমরা এটিকে এমন বিশেষ হিসেবে দেখিনি যেটি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবো, জাস্ট জিনিসটা অদ্ভুত লেগেছিল। তো আমি সেটি লক্ষ্য করেছি। এবং আমি বুঝতে পারিনি সে কি করছে, যতদিন না আমি নিজেই ধর্মান্তরিত হয়েছি এবং প্রার্থনা করতে শিখেছি। “ওহ হ্যাঁ, তো তাহলে আমার আমার সৎ ভাই, সে একজন মুসলিম”।
চলুন আমরা আপনার ইসলাম গ্রহণের গল্পে ফিরে যাই। তো এই বইগুলো পড়ার পর, ফাইনালি মুসলিম হওয়ার জন্য আপনি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
তো বিষয়টা যুক্তিসংগত ছিল। বাকিটা শুধু আমার জন্য ছিল… যে আমি এটাকে ডিসিপ্লিনের মতন করে দেখেছিলাম। দিনে পাঁচবার নামাজ পড়া, আপনার জীবনে ডিসিপ্লিন তৈরি করে। আপনার জীবনকে সংঘটিত করে ইত্যাদি ইত্যাদি। তো মানে, সেই সময় আমি স্মোকিং ছেড়ে দিয়েছিলাম। এবং, আমি একজন মিউজিশিয়ানও ছিলাম। তো আমি মিউজিক ছেড়ে দিই, তো আমি, আমার জীবন তখন আমি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম যে আমি ইসলামের জন্য প্রস্তুত।
আপনার কালেমা পড়ার মুহুর্তটিতে নিয়ে যেতে পারবেন আমাদের? তখন কেমন লেগেছিল আপনার ?
তখন আমি এক কমিউনিস্ট চিন্তা ভাবনার এক সমাজে বাস করতাম। এবং আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এবং ঘুমের মধ্যে আমি দেখলাম আমি একটি বাইকে চড়ছি। চলছি একটি সুবিশাল সংরক্ষিত এলাকার মধ্য দিয়ে একটি গ্যারাজ বা অন্য কিছুর ভেতর। দরজাটা সামান্য খোলা ছিল। আমার প্রবেশ করার জন্য যথেষ্ট ছিল, কিন্তু ভিতরে সম্পূর্ণ অন্ধকার। আর আমি আরো সামনের দিকে চলতে থাকলাম। আর প্রতিবারই আমি পেছন ফিরে নিশ্চিত হতাম যে আমি যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছি সেটি এখনো রয়েছে। তো, আমার মনে এক ধরনের ভয় কাজ করছিল, হয়তো দরজাটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তো আমি একটি পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত চলতে থাকলাম। যখন পেছনে ফিরলাম আর সব কালো হয়ে গিয়েছিল, আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। এবং এবং সেই মুহূর্তে আমি অনুভব করেছিলাম যে আমি যদি এখান থেকে বের হতে না পারি আমি কখনোই
বাইরে আসতে পারবো না। মৃত্যুর সন্নিকটে। তো আমি চিৎকার করতে লাগলাম, লোকজনকে ডাকলাম সমাজে আশেপাশের মানুষদের কিন্তু আমার গলা থেকে কোন আওয়াজ বেরোচ্ছিল না। বুঝলেন এবং কেউ আমার কথা শুনতে পায়নি। কেউ এসে আমাকে সাহায্য করতে পারেনি। অবশেষে অনুভব করলাম, সব শেষ, আমি আর নেই। যে মুহূর্তে আমি আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম এবং মেনে নিলাম আর কোন উপায় নেই, এইখান থেকে বের হয়ে আসার, আমি জেগে উঠলাম। আর এটিই আমার ফাইনাল পয়েন্ট ছিল। এবং আমার কাছে আল্লাহর অস্তিত্বকে নিশ্চিত করেছিল। আল্লাহই আমাকে এখান থেকে বের করে এনেছেন। আমার বন্ধুরা, আমার পরিস্থিতি, কিছুই আমাকে সাহায্য করতে পারেনি। তো এটি আমার ফাইনাল পয়েন্টের মতন ছিল। এরপর বাকি “পথগুলো যেন মসৃণ এবং সহজ হয়ে গিয়েছিল।
আমি গল্পটি সামান্য ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে নিতে চাই। আপনি মুসলমান হয়েছেন, আর আপনার মা ইসলামের রক্ষক, এবং আপনার পিতা ছিলেন ইসলামের সেবক, যেমনটি আপনি বলেছেন। তাহলে কি তারা শেষ পর্যন্ত মুসলমান হয়েছিল?
হ্যাঁ, আলহামদুলিল্লাহ, ইসলাম সম্পর্কে তাদের কোন নেতিবাচক দৃষ্টি ছিল না। কারণ তারা দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালীন ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। এবং তারা ইসলাম এবং এর শিক্ষা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন। এবং তাদের ধারণা মতে এটি একটি ভালো ধর্ম, এবং এর ফলে যেটি হয়েছে যে তাদের অনেক ফ্রেন্ড, তারা সেখানে থাকাকালীন, তাদের বন্ধু-বান্ধবের অর্ধেকের থেকে বেশি মুসলিম ছিল। তো তারা একদম প্র্যাকটিক্যাল লেভেলে মুসলিমদের প্রকৃতস্বরূপ দেখেছিলেন। আর তারা খুব ভালো মানুষও ছিল, তো তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক ছিল। এমনকি আমার মা টরেন্টো ইউনিভার্সিটিতে ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন নিয়ে যখন পড়াশোনা করছিলেন, তার প্রফেসর ছিলেন ইহুদি। এবং বুঝলেন, যখন সে কথা বলতো, ক্লাসে যখন অন্য ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা হতো, সে সবসময় ভালো এবং খারাপ উভয়টি দেখিয়ে দিত। কিন্তু যখন ইসলামের কথা আসে, মা আবিষ্কার করলেন সে শুধু খারাপ কথাই বলছে। সে কোন
ভালো কথা উল্লেখই করতো না। এমনকি একদিন তিনি, লেকচারের মাঝখানে উঠে দাঁড়ালেন এবং প্রফেসরকে প্রশ্ন করলেন, “ইসলামে কি ভালো কিছুই নেই? তাহলে আমরা এটা শিখছি কেন? পুরো ধর্মটাই যেহেতু খারাপ,” বুঝলেন! তো মা নিজেও কাঁধে দায়িত্ব নিয়েছিলেন যেসব টেক্সটবুক কোর্সগুলোর জন্য নির্ধারিত ছিল সেগুলোর বাইরে টেক্সটবুক থেকে খুঁজে বের করার। তিনি অন্যান্য লেখকদের লেখা পড়লেন। যদিও কিছু অমুসলিম ছিল, কিন্তু তারা নিরপেক্ষ ছিল তাদের মতাদর্শনের ক্ষেত্রে। তো তিনি ইসলামকে ডিফেন্ড করতে শুরু করলেন। লেকচার হলের ভেতরে, এতগুলো ছাত্রদের মাঝে, বুঝলেন। এবং তিনি অবশ্যই, প্রফেসরের কাছে খুব একটা পছন্দনীয় হলেন না। তো তিনি বললেন যে, তারা তাকে মাত্র B গ্রেড দিয়েছে। তার অন্যান্য সাবজেক্টে গ্রেড ছিল A তো অন্তত তুমি আমার সাবজেক্টে A পাবে না। আমি যেমন বলেছি, যে আমরা নামে মাত্র খ্রিস্টান ছিলাম। মানে, মানে রবিবার আমরা চার্চে যাব। সব সন্তানরা, যদিও আমার বাবা কখনো যাননি। তিনি অবশ্যই, এটা খুব বাচ্চাসুলভ ছিল যে, আমরা এটাকে নিয়ে প্রশ্ন করবো না। বাবা সেখানে যান না, কিন্তু আমাদের পাঠাতেন। বলতেন, “তুমি মায়ের সাথে যাও”। তাই আমরা সবসময় যেতাম, কিন্তু তিনি যাননি। পরে যখন আমি ইসলাম গ্রহণ করি আর তার সাথে এবং মায়ের সাথে ইসলাম সম্পর্কে কথা বললাম, তিনি আমাকে বলেছিলেন, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর, যখন তিনি স্কুলে পড়তেন, এবং সেই সময়ের ব্রিটিশ স্কুলে, তারা যুক্তিবিদ্যা শেখাতো, যখন তিনি খ্রিষ্ট ধর্মের কথা চিন্তা করতেন, কারণ তিনি চার্চের একজন সংগীত শিল্পী ছিলেন। আমার দাদা একজন যাজক ছিলেন। তখন তিনি যীশুকে ঈশ্বর হিসেবে ভাবতেন, তার কাছে এটা লজিক্যাল লাগতো না। মানে তার কাছে এসব অর্থহীন ছিল। তাই সেই কারণে, সেই সময় থেকে, তিনি সর্বদা এক ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন। যীশুর কাছে প্রার্থনা করেননি। এবং এখন তার ভাই ও বোনেরা, অবশ্যই তারা বাবাকে নাস্তিক বলতো। তো তিনি এইভাবেই বড় হয়েছিলেন। আর মনে রেখেছিলেন। সেজন্যই তিনি কখনো চার্চে যাননি, কারণ গির্জায় যীশুকে ঈশ্বর হিসেবে উপাসনা করা হয়। আমার ইসলাম গ্রহণের পর আরো ২১ বছর লেগে গেছে তাদের দুজনের মুসলিম হতে।
ইসলাম কি ব্যাখ্যা ও প্রচার করতে আপনার ২০ বছর লেগে গিয়েছে?
না, সেটা আমি বলবো না। মানে আমি সবকিছুই চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমি তাদের ২৪ ঘন্টা ওয়াচ করে বেড়াতাম না। আমি কিছু বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা করেছিলাম। তারা মুসলিমদের আশেপাশে আরো বেশি থাকতে শুরু করেন। তারা নাইজেরিয়ায় যান এবং উত্তরাঞ্চলে পড়াতেন এসব স্কুলগুলোতে, যেখানে মুসলিমদের সংখ্যা বেশি ছিল। তারা ইয়েমেনে গেছিলেন, সেখানেও পড়িয়েছেন। সেটিও আরেকটি মুসলিম রাষ্ট্র। তারা সৌদি আরব গেলেন। তারা রিয়াদে একটি ইসলামিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করে বললেন। মূলত একজন টেকনিশিয়ান হিসেবে। তারা স্কুলগুলোকে তৈরি করেন। তো মুসলিমদের সাথে তাদের বেশ ভালোই যোগাযোগ ছিল, যার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ৯০ শতাংশই পজিটিভ প্রতিক্রিয়া। আর তারা যখনই তাদের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতেন, আর তাদের বন্ধুরা ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু তুলে আনতো, তারা এটাকে ডিফেন্ড করতেন। কারণ তাদের ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট মৌলিক জ্ঞান ছিল তারা জানতেন কোনটি সত্য এবং কোনটি মিথ্যে। তাদের জন্য ধর্মান্তরিত হওয়াটা বেশ সহজ ছিল। আমার বাবার ক্ষেত্রে, তিনি মূলত, তিনি আমায় যখন জানিয়েছিলেন তার ১৩ বছর বয়সের ঘটনাটি, তার আগে পর্যন্ত আমি জানতাম না, তিনি কেবল এক আল্লাহ এক ঈশ্বরেরই ইবাদত করতেন। কোন যীশু না, তিনি কোন মানুষের উপাসনা করতেন না। অন্যদিকে আমার মা, তাকে ইসলামে আসতে একটি ঘটনা উদ্বুদ্ধ করেছিল। সেটি হলো, তারা যখন জেদ্দায় ছিলেন, জেদ্দা ইনস্টিটিউটে কর্মরত। আর যখন আমি রিয়াদ থেকে যখন দেখা করতে আসি, রিয়াদে আমি তখন মাস্টার্স করছিলাম। আমার মা আমাকে বললেন যে, তিনি ঘরের মধ্যে ভুতুড়ে কিছু উপস্থিতি পাচ্ছেন। যেমন তিনি তাকালেন আর হঠাৎ যেন কিছু একটা দ্রুত সরে গেল। তিনি ঠিক বুঝতে পারছিলেন না কি ছিল সেটি। এবং তিনি সব রকমের চেষ্টা করেছেন, ঘর থেকে সেটাকে সরিয়ে ফেলার। তার বিশ্বাস সেখানে খারাপ কিছু ছিল। তিনি একটা ক্রস বুনেছিলেন, তিনি বেশ কয়েকটি বুনেছিলেন। একটিকে বাড়ির মেইন প্রবেশদ্বারের উপরে রাখলেন, একটিকে বেডরুমের দরজার উপর, আরেকটাকে লিভিং রুমে। কিন্তু তিনি এত কিছু করার পরও, সেটি বাড়ি থেকে যায়নি। তো আমি বললাম ঠিক আছে আমাকে এখানে সূরা আল বাকারা পড়তে দিন। ঘর থেকে শয়তান শক্তিকে তাড়ানোর জন্য ইসলামে সূরা আল বাকারা পড়তে বলা হয়েছে। তো আমি লিভিং রুমে বসে সূরা আল বাকারা পড়লাম। এরপর আমি রিয়াদে ফিরে গেলাম তারপর ঘটনাটা ভুলে গেছিলাম। তো ইসলাম গ্রহণের পর, তিনি বলেছিলেন, “জানো, যখন তুমি সেখানে গিয়ে
কোরআন পড়েছিলে”, তিনি বললেন, “ঠিক পরের দিন সব চলে গেল”। তিনি বলেছিলেন, “তারপর থেকে, আমি জানি ইসলাম সম্পর্কে কিছু তো ঠিক, অবশ্যই সবকিছু সম্পূর্ণ সঠিক”। তো এটি তাকে সবথেকে বেশি প্রভাবিত করে থাকে। এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। যে রাতে আমি টরেন্টোতে তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম এবং তিনি আমাকে বললেন, “তোমার বাবাকে বলো না, তাকে তার নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দাও”। এবং পরদিন সকালে আমার বাবা এলেন এবং তিনিও ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন।
ইসলাম গ্রহণের পর, আপনি ইসলামী দাওয়াতে সক্রিয় ছিলেন। আপনি কি আমাদের এমন কোন স্মরণীয় দাওয়া কর্মকাণ্ডের কথা বলতে পারবেন ?
সম্ভবত আমার এই যাবত অভিজ্ঞতার সবথেকে স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল, ছিল সে সময় যেটিকে বলা হয় “মরু ঝড়” প্রথম গালফ যুদ্ধের সময়। সেই সময়টিতে, প্রায় ৫ লক্ষ আমেরিকান সৈন্যকে সৌদি আরবে আনা হয়েছিল সাদ্দামকে পরাজিত করতে। তাকে কুয়েত দখল করা থেকে বিরত রাখতে। এক সৌদী সার্জেন্ট আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যিনি নিজেই যুদ্ধের আগে এবং পরে সেই সৈন্যদের মধ্যে দাওয়াতি কাজে নিয়োজিত ছিলেন। যুদ্ধ বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হয়নি, মাত্র কয়েকদিন। তো তিনি আমেরিকান সৈন্যদের অনেককে দেখতে যেতেন এবং চেষ্টা করতেন তাদেরকে ইসলামে দাওয়াত দেওয়ার। একটি দাওয়াত তাবু স্থাপন করার প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছিল। আমেরিকান সৈন্য যাদেরকে দেশের বাইরে স্থানান্তর করা হয়েছিল, তাদের শিবিরের ঠিক মাঝখানে। আর তাবুর উপর একটি লেভেল লেখা ছিল, “সৌদি আরাবিয়ান কালচারাল ইনফরমেশন টেন্ট”। আমরা “দাওয়া টেন্ট” সম্বোধন করিনি। আর সেখানে বেশ কয়েকটি টেবিল জুড়ে বুকলেটস ছিল, সৌদি আরব সম্পর্কে, প্রাণী সম্পর্কে, বিভিন্ন প্রকার পাখি এবং সৌদি আরবের সংস্কৃতি। আর সেগুলোর ভেতরে ইসলাম সম্পর্কিত কিছু প্রচারপত্রও ছিল। আর আমরা কিছু ইংরেজি কোরআনের কপিও রেখেছিলাম। যারা কিনতে আগ্রহী তাদের জন্য। এবং তাবুতে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব ছিল। যেমন, সামরিক বাহিনীর দল, সৈন্য, পুরুষ, মহিলা। একসাথে ১৫০ কিংবা ২০০ জন যারা আসতো। তাদের কাছে “একটি আরব সংস্কৃতি” হিসেবে পরোক্ষ ভাবে ইসলামকে রিপ্রেজেন্ট করা। কারণ সৌদি আরবের সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলতে গেলে আপনাকে মূলত ইসলাম আলোচনা করতে হবে, কারণ ইসলাম এটির মূল ফাউন্ডেশন। কারণ আপনি সেখানে যা কিছুই দেখবেন, তার বেশিরভাগই ইসলাম থেকেই এসেছে। তো তাদের এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল যে, জনগণের সংস্কৃতিতে ইসলাম কিভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে। এবং ধীরে ধীরে তাদের একটি সংখ্যককে মসজিদ পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়। দেখুন মসজিদের ভিতরে কি হচ্ছে, দেখুন মুসলিমরা কিভাবে প্রার্থনা করে। আর তারা নানান রকমের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। মহিলা সৈন্যদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সৌদী নাগরিক যারা আমেরিকায় পড়াশোনা করেছে, তাদের স্ত্রীরা সেখানে ছিল, তারাও আমেরিকায় পড়াশোনা করেছেন। তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। তো তাদের সুযোগ ছিল মুসলিম মহিলাদের সঙ্গে কথা বলার। কারণ তাদের ধারণা ছিল মুসলিম নারীরা সমাজে নির্যাতিত। তারা কালো বোরখা, হিজাব পড়ছে। তো তাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে আলোচনা চলাকালীন যা কিছু তাই জিজ্ঞেস করতে পারতো। আলহামদুলিল্লাহ, প্রায় পাঁচ মাসের এই সময়টুকুতে তাদেরকে দেশের বাইরে স্থানান্তর করা হয়। আর তাদের মধ্যে ৩০০০ এরও বেশি আমাদের তাঁবু থেকে ইসলাম কবুল করেছে, ইনশাআল্লাহ। তো আমার জন্য এটি খুবই চমকপ্রদ ছিল, যা আমি আগে কখনো দেখিনি। এটি অবশ্যই একদিনে হয়ে যায়নি, সময়ের সাথে সাথে হয়েছে। নিয়মিতভাবে লোকেদের দেখা যেত, আর তারপর তাদের ট্রেনিং দেওয়া, তাদের প্রস্তুত করা, কারণ তাদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণের পর পরই, হয়তো এক দু-সপ্তাহ পর নিজের দেশে ফিরে গেছে। তো চেষ্টা ছিল তাদেরকে যথাসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার, আর তাদের সেগুলো মানতে অনুপ্রাণিত করার, এমনকি আমেরিকায় ফিরে যাবার পরও। তো এটি আপনি ধরে নিতে পারেন যে, সবচেয়ে বড় দাওয়া ইভেন্ট যার সাথে আমি সংযুক্ত ছিলাম।
তো ইসলামের আগে আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কি ছিল, আর ইসলামের পর কি হলো?
ইসলামের পূর্বে কোন সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল না। কিছু কাজ হয়তো ছিল যেগুলো করা উচিত, আর যেগুলো করলে আপনি আরো উন্নত জীবনযাপন করতে পারবেন। আমার পড়া মার্কস ও এঙ্গেলসের সমস্ত লেখনীতে, আমার মনে হয় না আমি এমন কিছু পড়েছি যেটি আমাদের উদ্দেশ্যকে ব্যাখ্যা। করে কোথাও লেখা ছিল না সেটি। একজন বা একজন নাস্তিক হিসেবে আপনি অবশ্যই বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর সৃষ্টি একটি এক্সিডেন্ট। তো যদি দুর্ঘটনাই হয়, তাহলে দুর্ঘটনার উদ্দেশ্য কি? দুর্ঘটনা উদ্দেশ্যহীন ভাবেই ঘটে। দ্যাটস অল ইট ইজ। এখানে উদ্দেশ্যের কোন জায়গা নেই। হয়তো লোকেরা একসময় প্রশ্ন করতে পারে, ওয়েল তাহলে এসবের উদ্দেশ্য কি? তারা এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে, কারণ তাদের কাছে উত্তর নেই। একজন মুসলিম হিসেবে, অবশ্যই, জীবনের উদ্দেশ্য হলো জান্নাত লাভের যোগ্য হওয়া। পৃথিবীর জীবন হলো একটি পথ, অনন্ত জীবনের, যাকে আমরা জান্নাত বলি। তো আমরা কিভাবে জান্নাতে যেতে পারি? আল্লাহর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে। আর এজন্যই আল্লাহ বলেছেন, “ওয়ামা খলাক্বতুল জিন্না ওয়াল ইংসা ইল্লা লিয়া’বুদুন” – “আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এই কারণে যে তারা আমার ইবাদত করবে” [আল কুরআন ৫১:৫৬]।
জান্নাতে জীবনের পরিপূর্ণতা অর্জনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা হবে ইবাদতের মাধ্যমে।
ডক্টর বিলাল ফিলিপস আন্তরিক এবং জ্ঞানগর্ভ উত্তরের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা সবাই অনেক উপকৃত হয়েছি আল্লাহ দ্বীনের জন্য এই প্রচেষ্টা কে কবুল করুন।
আমিন! আমিন! আল্লাহ আপনাকে এবং আপনার টিমকে উত্তম প্রতিদান দিক আপনাদের এত সুন্দর প্রচেষ্টার জন্য, জীবনের প্রকৃত অর্থ মানুষের জানতে সাহায্য করার জন্য।
Views: 21