সসালামু আলাইকুম বোন খালিল আলী স্টার আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ ইটার্নাল প্যাসেঞ্জার হিসেবে আপনাকে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত খালি লিস্টার কে এবং আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমাদের সংক্ষেপে বলবেন ?
ওয়ালাইকুম আসসালাম আমার জন্ম লন্ডনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আমি বেড়ে উঠেছিলাম এমন একটি পরিবারে যেখানে সবাই নাচ গানের সাথে যুক্ত ছিল। আমার বড় খেলা যুক্তরাজ্যের অনেকগুলো থিয়েটার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক। আমার কাজিন সোনি যে সাইন করেছিল; অর্থাৎ এরকমই ছিল আমার জীবন আর আমার চারপাশের পরিস্থিতি। আমি স্টেজ স্কুলে গিয়েছিলাম খুব ছোটবেলাতেই । আমি নিয়মিত পারফর্ম করছিলাম তারপর কৈশরে পদার্পণের পর আমি বুঝতে শুরু করলাম। মনে হলো আমি কোথাও যেন নিজের কে খাপ খাওয়াতে পারছি না। সম্ভবত আমি নিজেকে খুঁজে ফিরছিলাম। আমি বাড়ি ছেড়ে চলে গেলাম। আমি স্কুল ছাড়লাম ১৪ বছর বয়সে আর তারপর মিশে ছিলাম নানা ধরনের মানুষের সাথে। কিন্তু এই জার্নিটা মোটেই সোজা সাপটা ছিল না আমার। এই পর্যায়ে আসতে অনেক সময় লেগেছে।
বিশ্বাসের দিক থেকে আপনার জীবন কেমন ছিল? আপনি কিসে বিশ্বাস করতেন ?
আমার পরিবার ইহুদি আমরা মোটেই ধার্মিক ছিলাম না এবং আমি সত্যিই পথভ্রষ্ট ছিলাম । আমার বাবা-মা দুজনেই সংশয়বাদী তারা ধর্মে বিশ্বাস করতেন না। তাই আমরা বাড়িতে শুকুরের মাংস খেয়ে বড় হয়েছি যেটা মোটেই ইহুদি সুলভ নয়। আমরা ক্রিসমাস পালন করতাম আমরা আসলে ইহুদি ধর্ম এর কোন উৎসবই পালন করতাম না। তাই নিজেকে আমার ইহুদি বলে মনেই হতো না এবং আসলে আমি কাউকে বলতামই না যে আমরা ইহুদি । নিজেকে ইহুদি পরিচয় দিতে আমার কেমন লজ্জাবোধ হতো আমি জানিনা কেন ! হ্যাঁ,ব্যাপারটা এখন আমি বুঝি তবে এটা ঠিক যে দীর্ঘ সময় ধরে আমি আমার ঐতিহ্য নিয়ে মোটেই গর্বিত ছিলাম না। ইহুদি ধর্মে আমার মোটেই বিশ্বাস ছিল না । আমি খ্রিষ্ট ধর্মে দৃষ্টিপাত করেছি কিন্তু আমি এই ধর্ম মোটেই বুঝতে পারিনি । আমি বুঝতে পারিনি তিনটি ঈশ্বরের কথা কিভাবে ধর্মটা একেশ্বরবাদী হয়। আমি এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করতাম আর প্রার্থনা করতাম। আমার মনে আছে যখন খুব কঠিন হয়ে গেল আমার এক বন্ধু আত্মহত্যা করল আর এরকম সব বাজে ঘটনা ঘটে গেল আমার জীবনে। আমি সবসময় প্রার্থনা করতাম কিন্তু আসলে আমি জানতাম না আমি কার কাছে প্রার্থনা করছি ।
ইসলাম গ্রহণের পূর্বের মঞ্চের জীবনে ও উপস্থাপক হিসেবে আপনার ক্যারিয়ার সম্পর্কে আমাদের বলবেন কি ?
আমি মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলাম এবং খুব অল্প সময় আমি অনেক সেলিব্রিটির কাছাকাছি গিয়েছিলাম। ওইসব ক্ষেত্রে আমি অনেক কাজ করছিলাম বিবিসি ওয়ান এক্সট্রা আর ক্যাশ এমএফ এ কাজ করছিলাম। আমি রেডিওতে বড় বড় শো উপস্থাপনার কাজ পাচ্ছিলাম এবং অনেক বড় বড় তারকার অনুষ্ঠান হোস্ট ছিলাম। হাজার হাজার দর্শকের সামনে স্টেজে যেতাম আমি ।এটা ছিল আমার রুটি রুজির উপায় খুব অল্প পয়সেই আমি আমার কাজের জন্য টাকা পেতাম। আমাকে হাসি খুশি থাকতে হতো কিন্তু আমাকে দেখে যেমন মনে হতো আমার ভেতরটা তেমন ছিল না । তো কিছুদিনের মধ্যেই আমি ওই কাজ ছেড়ে দিলাম ।
আপনার ভাষ্যমতে আপনি তারকাদের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছেন এবং বাইরে থেকে তাদের জীবন খুবই ঝলমলে আর চাকচিক্যময়। ভেতর থেকেও কি সেটা একই রকম ? এ ব্যাপারে কোন ইন্টারেস্টিং স্টোরি আছে কি ?
যদিও বিষয়টা হাস্যকর কিন্তু এই বিষয়টা আমার জীবনের অস্তিত্বের ব্যাপারে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, কারণ এন্টারটেইনমেন্টের জগত একজন হিসেবে আমি সবসময় এমন সব মানুষের কাছাকাছি ছিলাম যাদেরকে দেখা হয় কেবল বাইরে থেকে মনে রাখতে হবে ওই সময় instagram ছিল না ছিল শুধু প্যাপারজি আর টিভি ইন্টারভিউ। সেসব দেখলে, তারকাদের জীবনের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাদের গাড়ি আছে টাকা আছে নিজেদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে সাফল্য হিসেবে তারা যা চাচ্ছে তাই পাচ্ছে। আপনি অত ভাববেন তারা অত্যন্ত সুখে আছে তারা সব সুখ খুঁজে পেয়েছে । কিন্তু আমি দেখেছি যে পার্টির পর তাদের বেশিরভাগই ক্যামেরার সামনে হাসি খুশি মানুষটারই বেহাল আর করুন দশা মানুষটা সম্পূর্ণরূপে উদভ্রান্ত আর বিভ্রান্ত । যদি আমি তাদের জিজ্ঞেস করতাম আপনি সুখী নন কেন ? আপনার তো সবই আছে। তারা বলতো আমার মনে হয় না আমার কিছু আছে, আমার মনে হয় না আমি এখনো লক্ষ্য অর্জন করেছি। তারা কেউই মনে করতো না যে তারা সাফল্যতার মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মনে হতো তারা সাফল্য থেকে এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে আছে সাফল্যকে দেখছে বাইরে থেকে। তাই আমি একা একাই ভাবতাম, বেশ কম বয়সী হলেও আমি মনে মনে এ কথা ভাবতাম যে, জীবনে এর চেয়ে বেশি কিছু থাকা দরকার । এটা কিভাবে হয় যে, বাইরে থেকে এত মানুষের ভক্তি পাওয়া এই মানুষগুলো যাদের দেখে মানুষ আনন্দে চিৎকার করে ওঠে, তারা কিভাবে এত অসুখী হতে পারে? আর আমি দ্রুতই উপসংহারে পৌঁছালাম যে এই মানুষগুলো অসুখী; কারণ ক্যামেরার সামনে নিজেদের আসল রূপ প্রকাশ করছে না, তারা তুলে ধরছে নিজেদের বাইরের রূপ তাদের এমন আচরণ করতে হচ্ছে ঠিক যেমন ভাবে সমাজ তাদেরকে দেখতে চায়। তাই ভেতরে ভেতরে তারা পরিপূর্ণ বোধ করে না। আমার মনে আছে, একবার আমি একটা বিশেষ পার্টি শেষ হওয়ার পরে ওখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি কারো নাম বলবো না, যদিও নাম আমার মনে আছে । ওখানে হিপহপ ইন্ডাস্ট্রির খুব বড় বড় তারকারা উপস্থিত ছিলেন। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেই মানুষ চিৎকার করে আর ছবি তোলে। আমার মনে আছে আমি তাদের সাথে হেঁটে যেতাম আর তারা সব কাজ শেষ করে বসতো। একজন পুরুষ সেলিব্রেটির কথা বলছি। তাকে দেখে মনে হতো তিনি যেন জীবনের সকল আশা ছেড়ে দিয়েছে। সে সময় আমার বয়স ছিল প্রায় ১৬ বছর । আমার মনে আছে, তিনি চিৎকার করে আমাকে বলেছিলে্, তাকে শয়তানে ভর করেছে। এবং সেই শয়তানকে একমাত্র যে মানুষটি দূর করতে পারে সেটা হলাম আমি । মানে এখন আমার মেয়ের যে বয়স, তখন আমার বয়স প্রায় তেমন, অর্থাৎ আমাকে শিশুই বলা যায়। আর বড় একটা মানুষ যার দিকে আমরা সমীহ নিয়ে তাকাই সেই মানুষটা পাগলের মত চিৎকার চেচামেচি করছে। আমার মনে আছে তখন আমি মনে মনে ভেবেছিলাম, এই যে জীবন আমি চাই না। এরা জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এবং আমার কাছে যে ব্যাপারটা খুব স্পষ্ট হয়ে গেল সেটা হচ্ছে হ্যাঁ, ওদের মেধা আছে হ্যাঁ, আর ওরা সফল হয়েছে কিন্তু ওদের এমন সব মানসিক আঘাত রয়েছে, যেগুলো ওরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ভেতরে একটা শূন্যতা রয়ে গেছে, যেটা টাকা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। মনে করি এটাই ছিল আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়, এবং এর পরপরই আমার জীবনে শুরু হয় গভীরভাবে নিজেকে খোঁজার পর্ব।
আমি কি জিজ্ঞাসা করতে পারি আপনার কাজটা কি ছিল? আপনার বয়স ছিল মাত্র ১৬, তাহলে এসব সেলিব্রিটিদের সাথে আপনি কি করছিলেন ?
আমি বরাবরই কথা বলায় খুব পারদর্শী ছিলাম। তাই আমাকে কাজ দেওয়া হয়েছিল মঞ্চে তাদেরকে উপস্থাপন করার, অর্থাৎ আমি বলতাম “এবার আসছে অমুক !” এবং তারপর আমি ওই তারকার জীবন বৃত্তান্ত এই ধরনের কথাবার্তা বলতাম। মঞ্চের পেছনে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজেও থাকতাম আমি। ব্যক্তিগত সহকারীর কাজ নয়, আমার কাজ ছিল ইভেন্ট গুলো যাতে ঠিকঠাক মতো হয় সেটা নিশ্চিত করা। আমার বয়স কম ছিল কিন্তু আমি নিয়োগ পেয়েছিলাম দ্রুতই, কারণ মঞ্চের কাজে আমার আগ্রহ আর অভিজ্ঞতা ছিল এবং আমি কবিতা ভালোবাসতাম খুব, মাঝে মাঝে মঞ্চে কবিতা আবৃত্তিও করতাম। অর্থাৎ আমি ওই জগতে অনেক কিছুই করছিলাম। আমি এসব নিয়েই গড়ে উঠেছিলাম। আমার আরো পাশা আকাঙ্ক্ষা ছিল। সেসব লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমি ওই সময় নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম।
কি কারণে আপনি নিজের বিশ্বাসের ব্যাপারে সন্ধিহান হয়েছিলেন? আপনি একজনের প্রভাবের কথা বলেছেন সেটি কি কোন ঘটনা বা ভাবনা ?
যখন আমার বয়স ১৩ পার হচ্ছিল, তখন আমার দাদা মারা গেলেন এবং সে সময় আমরা তার খুব কাছাকাছি ছিলাম। দ্বিতীয় ঘটনার আগে সেবারই, অর্থাৎ দাদা মারা যাওয়ার সময় পরিস্থিতিটা ছিল খুব ভয়ঙ্কর, কোন ধর্মবিশ্বাস ছাড়া যখন একজন মানুষ মারা যায়, মনে করা হয় মৃত্যুই সবকিছুর সমাপ্তি। মনে আছে, আমার মনে হচ্ছিল আমার মাথার উপর যেন অন্ধকার নেমে এসেছে কারণ আমার ধারণাই নেই দাদা কোথায় গিয়েছিলেন। তিনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন? মৃত্যুর পর আরো কিছু থাকার কথা। তিনি কি বেঁচে ছিলেন শুধুই মরে যাবার জন্য? এবং সেবারই প্রথমবারের মতো মনে হয়, তখন আমি ১৩ তে পা দিয়েছিলাম, আমি গভীরভাবে ভেবেছিলাম যে, মৃত্যুর ওপারেও কিছু থাকতে পারে। এরপরেই আমি বিদ্রোহী হয়ে উঠলাম, বাড়ি ছাড়লাম আর স্বপ্নের ক্যারিয়ারের পিছে ধাওয়া করে নানা জায়গায় ঘুরলাম। এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করার পর আমার ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল, যখন আমি বড় বড় সেলিব্রিটিদের কাছাকাছি গিয়ে বুঝতে পারলাম যে, খ্যাতি পাওয়া মানেই সুখী হওয়া নয়। কিছু একটা বাদ পড়ে যাচ্ছে। এবং আমি ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারটা গভীরভাবে ক্ষতিয়ে দেখা শুরু করলাম। আমার মন ধর্মবিশ্বাসের অনুগামী ছিল না। কিন্তু তবুও আমি অনেক ধর্ম খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলাম। ইসলাম ধর্মকে আমি কখনোই বিবেচনায় নেইনি, কারণ এই ধর্মটাকে আমার অহেতুক মনে হতো।
ইসলাম সম্পর্কে আপনার প্রথম জানা এবং পরিচয়টা কিভাবে ?
সে সময় দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনে আমার যে বান্ধবীর সাথে আমি ছিলাম, দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের দীর্ঘ সময় আমাদের কর্মক্ষেত্র ছিল একই ধরনের। আমরা একসাথে কাজ করতাম । সে মুসলিম হয়েছিল, এবং আমি আসলে জানিনা সে কেন মুসলিম হয়েছিল। ঠিক কি কারণে সে ধর্মান্তরিত হয়েছিল, আমার আসলেই জানি নেই। কিন্তু সে মুসলিম হয়েছিল এবং আমাকে সে বলেনি যে সে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানে। সে সরাসরি আমাকে বলেছিল, “আমি একজন মুসলিম”। এ কথা শুনে আমি মর্মাহত হয়েছিলাম। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। আমি মনে মনে বলেছিলাম, “তুমি তো তোমার জীবনটা নষ্ট করেছো ” সত্যি বলতে গেলে, তেমনটা আমি ভেবেছিলাম, কারণ আমরা দুজনেই ওই জগতে ছিলাম। আমি সত্যি ভেবেছিলাম যে, সে তার জীবনটা দর্দমায় ছুড়ে ফেলেছে এবং তার ক্যারিয়ার শেষ। ভেবেছিলাম সে আর কিছুই করতে পারবে না। তারপর আমি লক্ষ্য করতে লাগলাম কতটা বদলে গেছে সে।
কোন জিনিসটা আপনাকে ইসলামের পথে নিয়ে এসেছে ? ঠিক কি কারণে আপনার মধ্যে এই বোধ এবং বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, “এটাই হতে পারে আমার জন্য সঠিক ধর্ম”।
যখন আমি শুধু আত্ম-অনুসন্ধান শুরু করি, তখন প্রথমেই আমি জেনেছি ইহুদি ধর্ম সম্পর্কে, কারণ সেটাই ছিল আমার জন্য স্বাভাবি্ যেহেতু আমার পরিবার ইহুদি এবং আমিও তাই। এক সেকেন্ডের জন্য বুঝে উঠতে পারিনি কিভাবে ধর্ম বলে যে ইহুদি হয়ে না জন্মালে ইহুদি হওয়া যাবে না। যারা নিজেদেরকে সত্যিকারের ইহুদি বলে দাবি করে, তারা আপনাকে বলবে যে, আপনার মা ইহুদি হলে তবেই আপনি ইহুদি হতে পারবেন। অর্থাৎ এটা জন্মগত অধিকারের ব্যাপার। এবং তারা সত্যি সত্যি বিশ্বাস করে যে, “আর কেউ ইহুদি হতে পারবে না”, “আর কেউ এই ধর্মে প্রবেশ করতে পারবে না”। আমি আমি মনে মনে ভাবলাম, তাহলে পৃথিবী জুড়ে এত চমৎকার সব সংস্কৃতি, এত জাতি আর এত সুন্দর সব মানুষ সৃষ্টি হয়েছে শুধুই জাহান্নামের আগুনে পোড়ার জন্য? এই ব্যাপারটা আমি বুঝতেই পারলাম না, আর বুঝতে চাইলামও না। তাই আবার খ্রিষ্ট ধর্মের দিকে মনোযোগ দিলাম আমি। বরাবরই আমার মনটা ছিল একেশ্বরবাদে। যদিও আমি জানতাম না সৃষ্টিকর্তা আসলে কী? আমি বুঝতাম না তিনজন সৃষ্টিকর্তার কথা বলা হলেও তারা আবার কিভাবে একজন হন। তিনি মারা গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি জীবিত। আমার মাথায় এসব ঢুকতো না। অবশেষে আমার বান্ধবী যখন মুসলিম হলো, আমাকে এসব বলতে লাগলো সে। মূলত যে ব্যাপারটা আমার মনকে নাড়া দিল সেটা হচ্ছে, যে কেউ মুসলিম হতে পারে। মানুষটা কোথাকার, সে কত পাপ করেছ্ এসব কোন ব্যাপারই নয়। এবং আমি বুঝতে পারলাম, এটা এমন একটা ধর্ম যেটা আপনি এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করল, এবং সকল নবী-রাসূলকে বিশ্বাস করলে আপনার প্রতি কোন প্রকার বৈষম্য দেখাবে না, মানে প্রত্যেকেরই সুযোগ রয়েছে। আমার মন বলছিল এটাই হচ্ছে সত্য। এটা সত্য না হয় পারে না। ঈশ্বর কেন আমাদের সৃষ্টি করবেন, জাহান্নামের আগুনে পোড়াবার জন্য?
কোন জিনিসটার জন্য আপনি মুসলিম হতে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন ?
আমি নিয়মিতই প্রার্থনা করছিলাম। আমি আমি আমার বান্ধবীর সাথে ফজরের নামাজের জন্য উঠতাম, কারণ আমি তার সাথে থাকতাম, আর একজন মুসলিম হিসেবে সে ফজরের নামাজ পড়তো। সে আমাকে নামাজে ডাকতো, আমি তার পাশে বসতাম, আর দুই হাত তুলে বলতাম “হে আল্লাহ ইসলাম যদি সত্যি হয় তাহলে তুমি আমায় পথ দেখাও”। আমি মিনতি করতাম আমাকে একটা নিদর্শন দেখানোর জন্য। কিছু একটা চাইতাম আমি। মানুষের পথ নিদর্শনের জন্য কি দরকার আল্লাহ তা জানেন। তারপরে আমি একটা স্বপ্ন দেখি আর সেই স্বপ্ন আমার অন্তরটা নাড়িয়ে দেয়। স্বপ্নে দেখলাম, মুসলিম হওয়া অবৈধ আর তা সত্ত্বেও আমি মুসলিম হয়েছি, আর আমাকে সহ আরো অনেক মানুষকে কারাগারে রাখা হয়েছে মুসলিম হওয়ার কারণে, যেহেতু মুসলিম হওয়া একটা গর্হিত অপরাধ। আমাদের আটকে রাখা হয়েছে কারাগারে আর সেখানে বড় বড় বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রহরীরা। আর সেটা খুবই ভয়ঙ্কর, অন্ধকা্ গহীন একটা স্থান। জায়গাটা ইঁদূরে ভর্তি। ভাগ্য একটু ভালো হলে, সেল থেকে একটু বেরোতে পারল্ সামনের রাঙ্গিনায় গিয়ে পা ছড়িয়ে একটু আরাম করা যায়, অথবা একটু দৌড়াদৌড়ি করে ব্যায়াম করা যায়। আর আঙ্গিনার অপর পাশে দেখা যায় একটা বেড়া। ওই বেড়ার পেছনে অনেক মুসলিম আছে, আর সেই জায়গাটা নিরাপদ। প্রহরীরা তাদের ছুতে পারে না। তারা নিরাপদ রয়েছে, এবং তারা ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ করে বলছে যে, তারা মুসলিমদের মুখ চায় এখান থেকে। তারা চিৎকার করে বলছে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!” কিছু মানুষ কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছে। কেউ বেড়ার অপর পাশে যেতে পারলেই সে মুক্ত। আমি মুক্তি পাওয়ার উপায় খোঁজার চেষ্টা করছিলাম, ওখানে শুধু আমার নয়, সবার মুক্তি। আমি সবাইকে বললাম যে, আমাদের বের হয়ে অন্য বেশ ধারণ করতে হবে, যাতে আমাদেরকে মুসলিমদের মতো না দেখায়। কিভাবে তা সম্ভব হলো সেটা আমার মনে নেই, কিন্তু আমার মনে আছে যে, আমরা ওই আঙ্গিনায় বেরিয়ে এলাম আর হারাদাররা বুঝতেই পারলো না যে আমরা মুসলিম, তারা ভাবলো, “অদ্ভুত ব্যাপার এরা কারা”? তারা বন্দুক নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতেই আমি বললাম, “কেউ কথা বলো না, ওরা জানতে পারবে না যে আমরা মুসলিম”। তখন হঠাৎ আমার পাশে একজন বলে উঠলো, “আলহামদুলিল্লাহ” আর গার্ডরা বুঝে যায় যে আমরা সবাই মুসলিম। একটা গার্ড আমার দিকে বন্দুক তা্ক করে। আমার দিকে বিশাল বন্দুকটা তাক করে গুলি করে সে। আর তখন ব্যাপারটা ঠিক কেমন হলো, এখনো আমি সেটা স্পষ্টভাবে স্মরণ করতে পারি। বুলেটটা আমার দিকে স্লো মোশনে ধেয়ে আসতে থাকে, আর তখন আমি উপলব্ধি করি,” আল্লাহ পারেন আমাকে রক্ষা করতে, কেন আমি একজন মানুষকে ভয় পাচ্ছি, যখন আল্লাহর রয়েছে সবকিছু করার ক্ষমতা”। তখন আমি ভয়কে ঠেলে সরিয়ে দিলাম, আল্লাহর উপর ভরসা রেখে বলতে শুরু কর্ “আল্লাহু আকবার”! আমার চারপাশের সবাই চিৎকার করতে থাকে “আল্লাহু আকবার”! আর তখন বুলেটটা আমার দিক থেকে ঘুরে গিয়ে কার্ডের দিকে ফিরে যেতে থাকে। তারপর যে ব্যাপারটা আমাকে ছুঁয়ে গেল সেটা হচ্ছে, ওই মুহূর্তে একটা হালকা, মৃদুমন্দ বাতাসের মত শ্বাস আমাদের সবাইকে, মানে সকল মুসলিমকে উঠিয়ে বেড়ার অপর পাশে নিয়ে গেল। আমি জেগে উঠে যখন আমার বন্ধুকে এই স্বপ্নের কথা বললাম, সে কাঁদতে লাগলো। আমি বললাম “কি হয়েছে”? তখন আমি কোরআন পাঠ করিনি, আমি কিছুই পড়েছিলাম না। আমি কোন হাদিস জানতাম না। আমার প্রচুর জ্ঞান ছিল না। আমি শুধু জানতাম যে, আমি ইসলামকে ভালোবাসি। সে আমাকে বলল, শেষ জামানায় একটা মৃদুন্ধ বাতাস এসে সকল মুসলিমের আত্মাকে রক্ষা করবে, ত্রাণ করবে। আমার মনে হলো “এটাই সত্য”। ওই স্বপ্নের গভীরতা সত্যি সত্যি বুঝতে পারলাম। আর আমি মনে করলাম, “আমি আর পারছি না”। আমি তো কালই মরে যেতে পারি। আমাকে মুসলিম হতেই হবে। আর তারপর এক সপ্তাহ না যেতেই আমি কালিমা শাহাদাত পাঠ করলাম।
আপনি কি শাহাদাত পাঠ করতে মসজিদে গিয়েছিলেন? ব্যাপারটা কিভাবে ঘটেছিল আর কেমন বোধ করেছিলেন ?
আমি বেকা স্ট্রিট স্টেশনে গিয়েছিলাম। ট্রেন থেকে নেমে টিকিট কাটার শাড়ি পেরিয়ে আমি এগিয়ে গিয়েছিলাম, আর আমার মনে আছে, তিন বোন বিশাল ফুলের তোরা হাতে আমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো। তারাই প্রথমে আমাকে মাথায় স্কার্প পড়তে সাহায্য করেছিল। স্কার্প পড়িয়ে তারা আমার সাথে রিজেন’স স্পার্ক মসজিদে হেঁটে গিয়েছিল। বেকা স্ট্রিটের এই মসজিদটি, সেন্ট্রাল লন্ডনের একটা বিশাল, সুন্দর মসজিদ। নিচতলায় আমি ইমাম সাহেবের অফিসে গিয়েছিলাম, আর তিনি আমাকে বলেছিলেন তার সাথে সাথে পাঠ করতে আর তখনই আমি পাঠ করেছিলাম কালিমা শাহাদাত। আমার মনে হলো আমি পুনরায় জন্মগ্রহণ করলাম। আমার মনে হলো যেন প্রতিটা পাপকর্ম, প্রতিটা অভিজ্ঞতা, আমার উপর থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে আর আমার জীবনটা হয়ে গেছে একটা সাদা পৃষ্ঠার মতো। আমি ভয়ে ছিলাম কারণ আমি জানতাম না কিভাবে আমি চলবো, কি করবো, কোথায় যাব, আর আমার পরিবার এটা কিভাবে নেবে। আমি আরো ভয় পেয়েছিলাম কারণ শাহাদাত পাঠ করার সময় ইমাম সাহেব আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ঈমানের ছয়টি স্তম্ভ কি? এবং সে ব্যাপারে আমার কোন ধারণাই ছিল না। তো আমার মনে হয়েছিল, “হে আল্লাহ আমি তো মুসলিম হতেই পারবো না”। কিন্তু তিনি এমন কিছু আমাকে ব্যাখ্যা করলেন যেগুলো ১৭ বছর পরও আজও আমার মনে গেঁথে আছে। তিনি বলেছিলেন, “আপনি যদি সমুদ্রের পানিতে আঙ্গুল রাখেন, তাহলে আপনার আঙ্গুলের ফোঁটায় পানির ফোঁটা সমুদ্রের তুলনায় যেমন যৎসামান্য। তেমনিভাবে সারাজীবন আপনাকে যে জ্ঞান অর্জন করতে হবে, সেটার তুলনায় এখনকার জ্ঞানও যৎসামান্য”। শেখার কোন শেষ নেই। আমরা কিছুই জানিনা । আল্লাহর জ্ঞান অতি বিশাল ।
আপনার ইসলাম ধর্ম গ্রহণে পরিবার এবং আশপাশের মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল ?
ওই সময় আমার বোনের বয়স ছিল ১৪ বছর এবং আমি শাহাদাত পাঠ করার এক মাস পর সেও শাহাদাত পাঠ করেছিল। মাশাল্লাহ, তাবারকাল্লাহ। আমি তাকে একটা বই দিয়েছিলাম যেটার নাম “দি ইলাস্ট্রেটেড গাইড টু ইসলাম”। ওই বইয়ে ইসলামের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। আমার মধ্যে আবেগ কাজ করে বেশি, এবং তার মধ্যে রয়েছে যুক্তির প্রাধান্য। ওই বইটা তাকে বোঝাতে সাহায্য করেছে যে, বিজ্ঞানের আগে অলৌকিক ঘটনা সত্যিই ঘটেছিল। তাই সে শাহাদাত পাঠ করেছিল, কিন্তু তার বয়স ছিল খুব কম। আমার মাকে আমার বলতেই হলো যে, আমি মুসলিম হয়েছি। আমার মা অনেক কেঁদেছিলেন আর আমাকে বলেছিলেন, “আজ যদি তুমি আমাকে বলতে তুমি মুসলিম না হয়ে প্রস্টিটিউট হয়েছো, তাহলেই বরং ভালো হতো”। আর আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি যে ইসলাম সম্পর্কে তার মতটা এমন হবে। বাস্তব পরিস্থিতিটা এমনই যে, আমার যৌথ পরিবার ইসলাম সম্পর্কে এখনো এরকম মতই পোষণ করে। তাই তাদের অনেকের কাছেই আমার মুসলিম হওয়াটা একটা মর্মঘাতী খবর। কিন্তু আমার নিজ পরিবারের ব্যাপারটা এমন, যেহেতু আমরা প্রবল ধর্মবিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠিনি।
শাহাদাত পাঠের পর একটা মিলিয়ন ডলার রেকর্ড কোম্পানিতে চাকরির অফার পেয়েছিলেন। তখন আপনার উত্তরটা কী ছিল এবং কি আপনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছিল ?
হ্যাঁ, একটা যে তে সাইন করার কারণে আমি একটা ফোন কল পেয়েছিলাম, আমার এজেন্ট আমাকে কল করে বললে, “আপনার হয়ে গেছে”। আমি বললাম, “কী”? তিনি বললেন, “আপনি পেয়ে গেছেন। চাকরিটা আপনি পেয়ে গেছেন ! স্টুডিওতে এত সময় কাটানো আর এত রিহার্সাল আপনার কাজে লেগেছে। ওরা আপনাকে সিলেক্ট করেছে”। শত শত মানুষ ওই চাকরির জন্য আবেদন করেছিল, এবং তবুও ওরা বেছে নিয়েছে আমাকে। একটা ট্যুর হবে এবং খুব বড় একটা সেলিব্রেটিকে হোস্ট করবো আমি। এবং তার অভিনয়ের আগে ও পরে আমাকে যেতে হবে আর তার সাথে নিজের কিছু কবিতাও আবৃত্তি করতে পারবো আমি। এটা হতে যাচ্ছিল বিশ্ব ভ্রমণ। ওরাই দিয়ে দিত হোটেলের ভাড়া আর বিমানের এর ভাড়া। স্বপ্নের মত ব্যাপার। আমি খুবই উচ্ছষিত ছিলাম এবং ব্যাপারটা আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। তারপর আলহামদুলিল্লাহ, হঠাৎ আমার মনে হলো, আমি তো মুসলিম। আমি তাকে বললাম, “আমি এটা করতে পারবো না”। উনি ফোনে চেচিয়ে বলেছিলেন, “তুমি তো তোমার ক্যারিয়ারটাই নষ্ট করে ফেলছো। করছোটা কি তুমি”? আমি শুধু জানতাম যে আমি ওটা করতে পারবো না। ওই সময় আমার কোন ধারণাই ছিল না কিভাবে আমি মুসলিম হয়েও আমার কণ্ঠস্বরকে কাজে লাগাতে পারি। তাই আমি ওইদিন থেকেই দীর্ঘ সময়ের জন্য সবকিছু বন্ধ করে দিলাম, যতদিন না আমি বুঝতে পারলাম যে আমি আমার কথা বলা শুরু করতে পারবো। কিন্তু এবার আমি কথা বলবো একজন মুসলিম হিসেবে, আলহামদুলিল্লাহ।
তো, তার মানে, মুসলিম হওয়ার পর আপনার ক্যারিয়ারে একটা ব্রেক ছিল।
এটা বুঝতে আমার প্রায় ১৪ বছর লেগেছিল যে, ইতিবাচক উপায়ে কথা বলেও নিজের কণ্ঠস্বরকে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেভাবে আমি টেডক্স এর মতো চমৎকার সব প্লাটফর্মে কাজ করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ। সম্পূর্ণ পর্দার আড়ালে থেকেও আমি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কিছু বক্তার সাথে অনেক কাজ করেছি।
তো, আপনি টেডক্স এ বক্তব্য রেখেছেন। নিকাব পরিহিত বক্তা হিসেবে আপনি কি কোন চ্যালেঞ্জের এর মুখোমুখি হয়েছেন ? মানুষ কি কোন কৌতুহলী প্রশ্ন করেছে বা কেউ কি আপনার পর্দার কারণে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ?
আমার টেডেক্স এর অনুষ্ঠানটা ছিল একজন শ্বেতাঙ্গ অমুসলিম পুরুষের সাথে, ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারায়। তিনি আমাকে বললেন, “এর আগে আমার কখনো কোন মুসলিম নারীর সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি”। অর্থাৎ আমার মনে হয় না যে তিনি যে কর্মক্ষেত্রে ছিলেন সেখানে নানা সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটেছে। অন্তত এটা বলা যায় ওখানে কেউই মুসলিম ছিল না। আর এটাই ছিল তার জন্য প্রথম সুযোগ। এবং টেরেক্স এর যে অনুষ্ঠানে আমি কথা বলছিলাম, সেটা ছিল এই ব্যক্তির সাক্ষাৎকার, সাথে একজন প্রযোজকও ছিলেন। তিনি হলিউডে কাজ করতেন, এবং ওই ইন্ডাস্ট্রিতে তার অনেক অভিজ্ঞতা ছিল। এবং আমার মনে হয় তারা কিছু পূর্ব ধারণা নিয়ে এসেছিলেন, কারণ তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনার এখানে আসা আর কথা বলাটাকে আপনার পরিবার কিভাবে নিচ্ছে” ? আর তিনি সত্যিই একটা ধাক্কা খেলেন যখন আমি তাকে বললাম যে, খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন একজন উদ্যোক্তা। তিনি ছিলেন একজন বিজনেস ওম্যান, আর আমরা তাকে ভালোবাসি আর তার মতোই হতে চাই। তিনি খুব শক্ত মহিলা ছিলেন। আমার এই কথা শুনে বেশ ধাক্কা খেলেন এবং হেসে উঠলেন। তিনি তিনি একথা জেনে খুবই অবাক হলেন যে, একজন ব্যবসায়ী নারী আমাদের নবীজির (সঃ) যে স্ত্রী ছিলেন। আমার টেরেক্স এর বক্তৃতা শুনেছে, এমন আরো অনেক মানুষের সাথে আমার এমনটা হয়েছে। তারা আমাকে মেসেজ করে বলেছে, “এটা আসলেই আমার ভাবনাকে বদলে দিয়েছে”। এক বিলিয়নেরও বেশি দর্শক থাকা একটা প্লাটফর্মে গিয়ে এরকম একটা বিষয় তুলে ধরা আর সাংস্কৃতিক ভুল ধারণা দূর করাটা সত্যিই আমার জন্য ছিল একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা। এবং আমি জেনেছি যে, আল্লাহর জন্য ত্যাগ করা কিছুর পরিবর্তে আল্লাহ সবসময় আরো ভালো কিছু দেন। এবং আমার ক্ষেত্রে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আল্লাহকে ভেবে আমি আমার পছন্দের ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু আল্লাহ আমার আমাকে তার চেয়ে অনেক ভালো কিছু দিয়েছেন যা আমি ভাবিনি।
ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্থে থাকা মানুষেরা হয়তো ভাবে, “ইসলাম গ্রহণ করলে আমার জীবনের সকল আনন্দ চলে যাবে”। আপনার কাছে প্রশ্ন, ইসলাম গ্রহণের পর কি আপনার জীবন নিরানন্দ হয়ে গেছে ?
আমরা হয়তো ভাবতে পারি বাইরে বেরানো পার্টিতে যাওয়া কিংবা এরকম কিছুর কথা, কিন্তু আমি আপনাকে বলতে পারি যে, ওই দিনগুলো ছিল আমার জীবনের কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়। বাইরে চাকচিক্য থাকলেও ওই জীবনটা আসলে তেমন কিছু নয়, কারণ তাতে ভেতরটা মনে হয় ফাঁকা। কিন্তু তবু, এত কঠিন সমস্যার মধ্যেও ,আমার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরও, বাচ্চাদের কি খাওয়াবো সেটা নিয়ে সমস্যায় পড়া সত্ত্বেও, এত এত কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইসলামের নির্দেশনা আমার হৃদয়কে সজীব রেখেছিল। ঈমানের সুখের জায়গা দখল করতে পারে না কোন কিছুই। ঈমানের সুখের সাথে কোন কিছুরই তুলনা চলে না । তো, হ্যাঁ, সংগ্রাম সব সময়ই চলবে। এই জীবনটা একটা পরীক্ষা, কিন্তু সত্যি করে সুখ নিহিত রয়েছে ঈমানে, এবং স্বাধীন পশ্চিমা দুনিয়ার কোন কিছুরই তুলনা চলে না এই সুখের সাথে।
আপনার জীবনের কঠিন সময় প্রার্থনার সময় আল্লাহর সান্নিধ্য বোধ করেছেন, এমন একটি স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করুন।
স্বামী ছাড়া একজন নারীর পক্ষে একা একা সন্তান লালন পালন করাটা খুবই কঠিন। পর্দানশীন একজন নারী হয়ে জীবনে কিছুই করা যাবে না, এরকম ধারণাও ভেতরে কাজ করে। মনে হয়, ঘর ভেঙে যাওয়া মানে বাচ্চাদের জীবনও ভেঙে চুড়ে যাওয়া। আমি আল্লাহর কাছে কাঁদতাম, কারণ আমি জানতাম যে আমাকে ওই বিয়ে থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং আল্লাহ চাইলেই সেটা হবে। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম আমাকে শক্তি জোগাতে আর আমার সন্তানদের উপর রহমত বর্ষণ করতে।
যদি আপনাকে মাত্র একটা দোয়া করতে বলা হয় যেটা নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে যাবে, তাহলে আপনি কি দোয়া করবেন ?
আমার বাবা এখন খুব অসুস্থ। তাই আমি দোয়া করছি যেন তিনি পথ খুঁজে পান। কিন্তু না । আমাকে, আমার পরিবারকে এবং আমার সকল প্রিয়জনকে জান্নাত দান করুন। আমিন। এটাই আমার দোয়া। আমি এই জীবনের জন্য দোয়া করতে চাই না। এটা নিশ্চিত যে, এই জীবনটা একটা পরীক্ষা। আমার বাবার সঙ্গে আমি যে পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি সেটা আমার কাছে পরিষ্কার, এবং আমার দোয়া হচ্ছে, আমার প্রিয়জনদের সাথে আমার যেন জান্নাতে সাক্ষাৎ হয়।
বোন খালিলা আলিস্টার, উত্তরগুলোর জন্য অনেক ধন্যবাদ, আপনার জীবন থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি।
আমিন, জাযাকাল্লাহু খায়ের। আমাকে এই চ্যানেলে ডাকার জন্য এবং আপনাদের এই চমৎকার কাজের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
Views: 18