এক.
ছোটসময় আমাদের বাড়ী সবসময় পিচ্চি মেলা হয়ে জমে থাকতো। গুড়া গাড়া ভাই-বোন,ভাতিজা-ভাগিনাদের মিছিলে বাড়ীতে টিকে থাকা বড়দের জন্য কঠিণই হতো।আর বছরের কোন কোন রমজান মাসে এই মিছিলের সারি আরো দীর্ঘায়িত হতো।
সারাদিন খেলাধুলা,হৈ-হুল্লোড়ে গুড়া গাড়ারা ব্যস্ত থাকতাম।তবে আমাদের প্রতিযোগিতার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো রমজান মাস।বড়রা ছোটদেরকে রোজা রাখতে অনেক উৎসাহিত করতো।মাসুমা আপু তো বিকেলে বাসায় ফেরার সময় রোজা না রাখলে দেরীতে গেট খুলে দিতেন আর ইফতারীতে কম খাবার দেওয়ার হুমকি দিতেন।
তবে বেশী রোজা রাখার বিরোধীও কেউ কেউ ছিলো।কোন গুড়া গাড়া অতিমাত্রায় রোজা রাখলে তার উপরে কিঞ্চিত রোজা ভাঙ্গার কৌশল নামিয়ে আনা হতো।
আমার পিচ্চিটা আবার রোজা রাখায় ভালো পারঙ্গম ছিলো।একবার গুড়া গাড়াদের মাঝে বাসায় রোজা রাখার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো।বড়রা আমাদের প্রতিদিন রোজা থাকতে দিতোনা।যার ঘুম ভেঙ্গে যেতো,সে রোজা রাখতো।পিচ্চিটা ঘুমকাতুরে থাকায় পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বলতো-আব্বুজী,আম্মা আমাকে ডেকে দেয় নাই।
ঐ বছরে রোজা রাখায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাই।আর পিচ্চিটা লাড্ডু…..
দুই.
পিচ্চির নামাজ পড়ার গতি কচ্ছপের মত। ওকে নামাজ পড়িয়ে কেউ এক ঘুম দিয়েও উঠে পড়তে পারে। স্বাভাবিক নামাজের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী সময় লাগায়।
পিচ্চিবেলা দুজনে দারুণ প্রতিযোগিতা হতো।আমি এক জায়গায় নামাজ পড়ছি,সে আরেক জায়গায় নামাজ পড়ছে……কিন্তু আমি নামাজের সালাম ফিরিয়ে দেখি, সে রুকু থেকে উঠেই জায়নামাজ তুলে ফেলছে আর বলছে, আমি আগেই নামাজ শেষ করে ফেলেছি।
তিন.
দাখিল-আলিম লেভেলে থাকতে দুজনে দেশের দু প্রান্তে থাকলেও ফোন ধরলেই অনেক সময় গল্প চলতো।ক্যাসেট বাজিয়ে গান শোনা।তারপর সেই গানের উপরে বিভিন্ন শিল্পীদের পছন্দ করা।আর গলা ফাটিয়ে হাসাহাসির জন্য আম্মু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতো। ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে তখন এম্নিতেই ফোন রেখে দিতে হতো।
কথা বলা শেষে সমস্যা একটাই হতো,আব্বুম্মু ফোনের ব্যালেন্স খুজে পেতোনা।
চার.
এখন আর পিচ্চিটা আগের মত ভালোবাসেনা।আমার উল্টা-পাল্টা কাজের জন্য নিয়মিত রাগ করে।মাঝে মাঝে পাগল ভেবে বসে।
এই তো…..চারদিন আগে দুজনের মাঝে হেব্বী ঝগড়া হয়ে গেলো।ফেসবুকে রাগী মেসেজ দিয়ে আনফ্রেন্ড করে দিলাম।পরেরদিন সকালে পিচ্চি আবেগী মেসেজ দেয়।
তিনদিন কোন মেসেজ দেই নাই, কোন ফোন দেই নাই।সুন্নাত লঙ্গন হবে বলে তিনদিন পূর্ণ হবার আগেই পিচ্চিকে ফোন দেই। আর পিচ্চি তিনদিন কোন মেসেজ ও ফোন না পেয়ে ফেসবুক ডিএক্টিভেট করে দেয়। পরে ফোন দিলে মেসেজ দেয়, আমি এই তিনদিন ভালো করে ঘুমাতে পারি নাই ,খেতে পারি নাই।
পরে আজ ঘন্টা খানেকের বেশী গল্প করে সকল রাগ, মান-অভিমান ভুলে হাসাহাসিতে মেতে উঠি।
পিচ্চিটাকে অনেক বেশী মিস করি। একজন ঢাকাতে ও আরেকজন রাজশাহীতে থাকলেও একজন আরেকজনকে মিস করতেই থাকি। নাটোর গেলে ও বাসায় না থাকলে বাসায় শূন্যতা অনুভব করি।
আল্লাহ আমাদের এই দুজনের ভালোবাসা সারাজীবন টিকিয়ে রাখুন।আমীন।।
Views: 2