এক.
৫ বছরের মাহরান তার এক হাতে একটি জিনিস লুকিয়ে দুই হাত সামনে বাড়িয়ে তার আম্মুকে বলছে-আম্মু,তুমি কোন হাত নিবা?
আম্মু ডান হাত ধরে বলছে,এটা।
মাহরান হাত লুকিয়ে ফেলে।একটু পর হাত ঘুরিয়ে জিনিসটি পরিবর্তন করে বা হাতে নিয়ে এসে বলে-আম্মু,এবার বলতো আমার কোন হাতে আছে?
আম্মু বা হাত ধরে বলে,এটায়।
মাহরান হাত খুলে জিনিসটি দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।ও কাঁদতে কাঁদতে বলছে-তুমি বার বার সঠিকটা বলে দিচ্ছো কেন?
আমি ওর কান্না বুঝতে পারিনি।আপাকে জিজ্ঞেস করলাম-ও খেলতে খেলতে কান্না শুরু করলো কেন?
আপা বললেন-আমি বার বার সঠিকটা বলে দেওয়ায় ও হেরে গেছে।এজন্য কষ্টে কান্না শুরু করছে।
বললাম-তাহলে আপনি সঠিকটা বলে দিলেন কেন?
আপা বললেন-আমি তো জানিনা,তার কোন হাতে জিনিসটি রয়েছে?অনুমানে বলে দেয়ার পরেও সঠিক হয়ে গেছে।
দুই.
মাহরান-মাহজুবা দুই ভাই বোন বাসায় ইচ্ছেমত দৌড়াদৌড়ি করছে।ওদের দৌড়াদৌড়িতে আমিও অংশগ্রহণ করলাম।বললাম-চলো,আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা দেই।
পিচ্চি দুইটা খুব খুশী হয়ে বললো,চলো মামা।
দৌড় শুরু করে দিলাম।ওদের সাথে একবারও জিততে পারছিলামনা।বেশীরভাগই মাহরান ফার্স্ট হয়ে যাচ্ছিলো।মাঝে মাঝে মাহরান জোর করে পিছনে টেনে ধরে রেখে মাহজুবাকে ফার্স্ট বানিয়ে দিচ্ছিলাম।আর যভনই মাহজুবা ফার্স্ট হচ্ছিলো,তখনই ছুটে এসে বলছে-মামা,তুমি লাড্ডু হয়েছো তাইনা!
আর ওদের আম্মুর কাছে ছুটে গিয়ে বলছে-আম্মু,মামা না লাড্ডু হয়েছে।
আবার দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হলো।এবার আমি ফার্স্ট হয়ে যাওয়ার সুবাদে পিচ্চি দুটো পরেরবার দৌডের গতি বাড়িয়ে দিয়ে আমার আগে চলে গেলো।
হাসতে হাসতে বললাম-আব্বুম্মু,তোমরা খুব দৌড়াতে পারো তাইনা!
দুটোই ভাব নিয়ে বললো-হুম মামা।তুমি আমাদের সাথে দৌড়ে পারোনা।
তিন.
পাড়ার প্রায় পিচ্চিই আমার ভক্ত।কিছু হলেই এগুলো দলবেঁধে আমার কাছে চলে আসে।আর পিচ্চিগুলোকে যতভাবে দুঃসাহসী করা যায়,সবগুলোই করি।যদিও এদের বাবা-মা রা এগুলো দেখলে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
কয়েকটা পিচ্চিকে উপরে ছুড়ে কিছুটা উপরে ছুড়ে দিচ্ছিলাম,আবার ধরে ফেলছিলাম।পিচ্চিগুলো প্রথমদিকে কিছুটা ভয় পেলেও একটু পরে মজা পাওয়া শুরু করে।
পরে যখন এদেরকে ছোট কোন গাছের ডালে বসিয়ে দিতাম,তখন সেখানে বসে থাকতে কোন ভয়ই পেতোনা।পরে নিজেরাই গাছ বেয়ে নিজেরাই সেখানে বসে যেতো।
দুনিয়ার সবাই বিজয়ী হতে চায়।বড়রা বিজয়ী হলে উল্লসিত হয়,আবার পরাজয় প্রতিহিংসা ও ঘৃণায় রুপ নেয়।একইভাবে শিশুরা বিজয়ী হলে তারা আনন্দিত হয়,হেরে গেলে কান্নার মাধ্যমে রাগ ও কষ্টের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকে।
শিশুদেরকে দিয়ে ছোট ছোট কাজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ‘তাদের খেলার অংশ হিসেবে’ করিয়ে নেওয়া যায়।গল্প বা ছড়া শোনাতে শোনাতে তাদেরকে অনেক নৈতিকতা ও আদর্শ শিখিয়ে দেওয়া যায়।শিশুটি যে কাজটি করতে সবচেয়ে বেশী পছন্দ করে,তাকে সেই দিকেই সবচেয়ে বেশী উৎসাহিত করা।কোন বাজে অভ্যাস রপ্ত করে থাকলে তুলনামূলক ভালো দিয়ে খারাপটি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।এখন থেকে তারা যা শিখবে,ভবিষ্যতে সেটাই তারা বাস্তবে প্রয়োগ করবে।যে শিশুটি যত বেশী কষ্টসহিষ্ণু,দুঃসাহসী,পরোপকারী হবে,তার দ্বারা তার ঘনিষ্ঠজনেরা,আত্নীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তত বেশী উপকৃত হবে।
প্রতিটি শিশুটির মেধা বিকাশে সহযোগিতা করা প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।
Views: 2
৩ Comments
প্রবীণ পথিক
THik বলেছেন।
মাহফুজ বিন নোমানী
ধন্যবাদ
সীমান্তের বিদ্রোহী
শিশুদেরকে দিয়ে ছোট ছোট কাজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ‘তাদের খেলার অংশ হিসেবে’ করিয়ে নেওয়া যায়।গল্প বা ছড়া শোনাতে শোনাতে তাদেরকে অনেক নৈতিকতা ও আদর্শ শিখিয়ে দেওয়া যায়।শিশুটি যে কাজটি করতে সবচেয়ে বেশী পছন্দ করে,তাকে সেই দিকেই সবচেয়ে বেশী উৎসাহিত করা।কোন বাজে অভ্যাস রপ্ত করে থাকলে তুলনামূলক ভালো দিয়ে খারাপটি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।